২১ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ১০:০৮

রাজধানীতে গ্যাসের তীব্র সংকট ॥ দুর্ভোগ চরমে 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুলা জ্বলছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাধ্য হয়েই অনেকে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, গ্যাস সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সারাদিন তারা গ্যাস পান না বললেই চলে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় দিনের বেলায় সর্বশেষ কবে ভালোভাবে গ্যাস ছিল- তাও মনে করতে পারছেন না গ্রাহকরা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন খবর জানা গেছে। গ্যাস না থাকায় জ্বলছে না চুলা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকেই বিকল্প হিসেবে এলপিজি সিলিন্ডার এবং বৈদ্যুতিক চুলার ব্যবহার শুরু করেছেন। এতে রান্নার খরচ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে একদিকে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা, তখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে রান্নার জ্বালানির অতিরিক্ত খরচ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাগ, যাত্রবাড়ী, খিলগাঁও রেলস্টেশন এলাকা, কলাবাগান, কাঁঠালবাগান, উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডা, মিরপুর, মুগদা, পান্থপথ এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। সংকটের বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানায়, চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ কম। এছাড়া নতুন করে একটি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের ফলে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কিছু কিছু জায়গায় গ্যাসের চাপ কম থাকছে। দিনে এসব এলাকায় গ্যাসের চাহিদা ১৮০ থেকে ১৯০ এমএমসিএফডি। সাধারণত ১৭০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করা হলে কোনো ঘাটতি থাকে না। ঘোড়াশালে নতুন সার কারখানায় দৈনিক ৪০ থেকে ৬০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করায় পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কমে গেছে। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

পূর্ব রামপুরা এলাকার বাসিন্দা চম্পা খাতুন বলেন, লাইনে দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না বললেই চলে। ভোরের দিকে হালকা গ্যাস থাকে, সাড়ে ৮টার পর আর থাকে না। দুপুর ৩টার পর হালকা গ্যাস পাওয়া যায়, তবে তাতে ঠিকমতো রান্না হয় না।

রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বসবাস করেন উম্মে সালমা। ভোর ৫টা থেকে ওই এলাকায় গ্যাস থাকে না জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদিন একটু গ্যাসও পাওয়া যায় না। সন্ধ্যার পর হালকা গ্যাস আসে, যা দিয়ে রান্না করা যায় না। রাত ১০টার দিকে গ্যাসের চাপ একটু বাড়ে। এমন অবস্থায় সারাদিন রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতিই নেই। ফলে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার ব্যবহার করছি।

গ্যাস সংকটের আরও ভয়াবহ চিত্র মেলে কামরাঙ্গীরচরের মুন্সিহাট এলাকায়। ওই এলাকার বাসিন্দা আঁখি আক্তার বলেন, গ্যাস না থাকায় গত এক মাসে এক দিনও চুলায় রান্না করতে পারিনি। রাত ১২টা, কখনো ১টার সময় গ্যাস কোনোরকম আসে। ফজরের আজানের সময় আবার চলে যায়। মাঝেমধ্যে টিপটিপ করে চুলা জ্বলে। এই আগুনে এক গ্লাস পানিও গরম করা যায় না।

নাম প্রকাশে এক গৃহিণী বলেন, গ্যাসের বিল প্রতিমাসে এক হাজার ৮০ টাকা দিতে হয়। আবার গ্যাসও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে কিছুদিন বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করেছি, এতে খচর বেশি হয়ে যায়। সবমিলিয়ে বিপদে আছি। এখন দুই-তিন দিনের খাবার একসঙ্গে রান্না করে রাখতে হয়। একই অবস্থা রাজধানীর খিলগাঁও রেলস্টেশন এলাকায়। তবে গোড়ান ৮, ৯ এবং ১০ নম্বর গলিতে গ্যাস থাকলেও উল্টোচিত্র শান্তিনগর এলাকার। শান্তিনগরের বাসিন্দা পপি আক্তার বলেন, সকালে গ্যাস চলে যায়। সারাদিন থাকে না, আবার রাতে আসে। আমাদের চার-পাঁচ দিনের খাবার একসঙ্গে রান্না করে রাখতে হয়। কখন গ্যাস আসে আর কখন চলে যায় বোঝা-ই যায় না।

যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বসবাস করেন রহমত আলী। গত কয়েকদিন ধরে দিনের বেলায় গ্যাসই থাকে না জানিয়ে রহমত বলেন, মাঝরাতে গ্যাসের চাপ আসে, আবার সকাল ৬টা-৭টার মধ্যে চলে যায়। কিছু করার নেই। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার কিনে নিয়েছি। গ্যাসের বিলও দিতে হয়, আবার সিলিন্ডার কেনার খরচও বহন করতে হচ্ছে। 

মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা শিউলি বেগম বলেন, গ্যাস নেই। সকাল ৬টা-৭টায় চলে যায়, আসে রাত ১১টা-১২টার দিকে। বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করি। এমন অবস্থায় রাজধানীতে গ্যাস সংকটের দ্রুত সমাধান করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ ও সরেজমিন চিত্র নিয়ে কথা হয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্যাসের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটা মোটামুটি ঠিক হয়েছে। আশা করছি, শনিবার থেকে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

https://www.dailysangram.info/post/538618