২০ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, ৩:৪৯

রিজার্ভ নিয়ে অনিশ্চয়তার সতর্কবার্তা আইএমএফের

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর মুদ্রানীতি প্রণয়নের তাগিদ

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) টাকার বিনিময় হারকে পর্যায়ক্রমে আরো শিথিল করার পরামর্শ দিয়ে বলেছে, সুদের হারও পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে হবে। এর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। স্বল্প মেয়াদে রিজার্ভ বাড়লেও এখনো খুবই অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে বলে মনে করে সংস্থাটি।

আইএমএফের এশীয়-প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি টিম বাংলাদেশে পক্ষকালব্যাপী রিভিউ মিশন শেষ করে গতকাল এক সংবাদ বিবৃতিতে এ কথা উল্লেখ করেছে।


বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ বেশ ভালো অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈশি^ক আর্থিক খাতের কঠোরতা, এর সাথে অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা-যা কিনা বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনীতিকে চ্যালেজের মুখে ফেলে দিয়েছে। একই সাথে টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মূল ফোকাস দিতে হবে মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নীতি সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত মুদ্রানীতিকে আরো কঠিন করা, মুদ্রা বিনিময় হারকে শিথিল করা এবং রাজস্ব খাতকে গতিশীল করা।


চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে আইএমএফের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদেশী মুদ্রা রিজার্ভের বিষয়ে বলা হয়েছে, স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে বাড়বে এবং এই রিজার্ভ চার মাসের আমদানির সমতুল্য হবে। তবে এরপরও রিজার্ভ নিয়ে খুবই অনিশ্চয়তা রয়েছে এবং পরবর্তীতে তা কমেও যেতে পারে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা মোকাবেলা করা গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের নন-পারফর্মিং ঋণ হ্রাস, তত্ত্বাবধান বাড়ানো, শাসনব্যবস্থা জোরদার করা এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোর উন্নতি আর্থিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। অভ্যন্তরীণ পুঁজিবাজারের বিকাশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তার জন্য অর্থায়ন জোগাড় করতে সাহায্য করবে। উল্লেখ্য, ঋণ চুক্তিতে থাকা বাংলাদেশের প্রথম কিস্তির অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি দেখে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য আইএমএফের আর্টিকেল-ফোরের অধীনে রিভিউ মিশনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। বাংলাদেশের জন্য চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাওয়া যাবে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ৪৭০ কোটি ডলারের মধ্যে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার বুঝে পেয়েছে বাংলাদেশ। আগামী নভেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৫১ কোটি ৯০ লাখ এসডিআর (স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস) পাওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের প্রথম কিস্তি দেয়ার সময় বেশ কিছু শর্ত দেয় আইএমএফ। এগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংকঋণে সুদহারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেয়া, ব্যাংকঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী করে প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, শেয়ারবাজারের উন্নয়নসহ বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্য দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/785480