৮ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ১০:২০

তিন পণ্যে নির্ধারিত দর অকার্যকর

বাজারে তিন সপ্তাহেও তিন নিত্যপণ্য দেশি পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের সরকার নির্ধারিত দর কার্যকর হয়নি। বরং পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেড়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এর পরও ওই তিন পণ্য নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না।

আলুর দাম না বাড়লেও সেই বাড়তি দামে স্থির হয়ে আছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। রাজধানীর বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েছে। পেঁয়াজ, ডিম, মুরগি ও সবজির নতুন করে দাম বাড়ায় আরো বেকায়দায় ভোক্তারা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। এতে কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে।

গতকাল রামপুরা, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের দেশি পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার যখন তিন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়, তখন দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা।
সরকার নির্ধারিত দর ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। দাম নির্ধারণ করার সময় ডিমের হালি ছিল ৫০ টাকা, দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ডিমের হালির নির্ধারিত দর ৪৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি আলু বিক্রি করছেন ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা।

এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিনির দাম নির্ধারণ করা হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। খোলা চিনির সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ১৩০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে এক লিটারের বোতল ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। বাজারে এখন শুধু সয়াবিন তেল সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে দুই দফায় ১০ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর এখনো কোনো ডিম আমদানি করা হয়নি। কবে নাগাদ আমদানির অনুমতি পাওয়া ১০ কোটি পিস ডিম দেশে আসবে, সেই নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুমতি পাওয়া ১০টি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ডিম আমদানি করে তা দেশে নিয়ে আসার জন্য তাগিদ দিচ্ছে সরকার।

মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করা তিন পণ্যের (ডিম, আলু, পেঁয়াজ) দাম কার্যকর করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মাঠে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদের মাধ্যমে নির্ধারিত দাম কার্যকর করার চেষ্টা চলছে। গত শুক্রবার রংপুরে নগরীর লেকসিটি পার্ক বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে লক্ষ্য নিয়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হয়নি। দাম আর বাড়েনি। তবে যে লক্ষ্য ছিল, সেটা এখনো পূরণ হয়নি। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চেষ্টা করছে।’

রামপুরার মুদি ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বাজারে সরবরাহ কমায় তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর দীর্ঘদিন এসব পণ্য বাজারে স্থিতিশীল ছিল। আজ (গতকাল) আমাদের প্রতি হালি ডিম কিনতে খরচ পড়েছে ৫২ টাকা, বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়। আগে কিনতে খরচ হতো ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, বিক্রি করা হতো ৫০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৮৫ টাকা, দাম বাড়ার কারণে সেটি এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৯৫ টাকায়।’ আলু আগের দামেই প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

জোয়ারসাহারা বাজারসহ পাশের এলাকায় প্রতিদিন পাইকারি দামে ডিম সরবরাহ করেন মো. বিল্লাল হোসেন। জানতে চাইলে গতকাল কালের তিনি কণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টির কারণে ডিমের সরবরাহ কম। এতে দাম বাড়তি। গত তিন থেকে চার দিন আগে পাইকারিতে প্রতি ১০০ ডিম এক হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, সেটি এখন বিক্রি করছি এক হাজার ২৬০ টাকায়। বৃষ্টি কমে গেলে আবার ডিমের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে এবং তখন দামও কমে যাবে বলে তিনি জানান।

এদিকে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে মুরগির দামও। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজির দাম বাড়তি
রাজধানীর বাজারে গতকাল সবজির সরবরাহ কম দেখা গেছে। বিক্রিও হয়েছে বাড়তি দামে। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটোল-চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুমুখি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

বাড্ডার সবজি ব্যবসায়ী মো. মালেক বলেন, ‘বৃষ্টির জন্য অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে সবজি তুলতে পারছেন না। এতে দুই-তিন দিন ধরে কারওয়ান বাজারে সবজির সরবরাহ কম। বিভিন্ন জেলা থেকে এখন যেসব সবজি আসছে, সেগুলো আমাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে বাজারে এখন সবজির দাম বাড়তি।’

https://www.kalerkantho.com/online/business/2023/10/08/1324941