৮ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ১০:১৭

অন্ধের বিরুদ্ধে ককটেল ফাটানোর মামলা!

মাওলানা মোহাম্মদ শামীম। ১৯৯০ সালে হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। এর পর থেকে চলাচল করেন অন্যের সহায়তা নিয়ে। অথচ সেই অন্ধ ব্যক্তিকে করা হয়েছে লোহাগাড়া থানায় গত ৫ অক্টোবর রাত ৯টা ৫ মিনিটে দায়ের করা কথিত গায়েবি মামলার তিন নম্বর আসামি। উল্লেখিত সেই মামলাতেও মাওলানা শামীমকে অন্ধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর একজন অন্ধ ব্যক্তিকে রাজনৈতিক গায়েবি মামলার আসামি করায় এলাকায় তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মামলার বাদি উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পদুয়া ঘোনার পাড়া এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে মো: মামুনুর রশীদ (২১)-এর তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ঠাকুরদীঘি এলাকার ব্যাংক এশিয়ার সামনে মামলার ১ নম্বর আসামি আধুনগরের বাসিন্দা উপজেলা জামায়াতের আমির আসাদুল্লার নেতৃত্বে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে সাধারণ জনতাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, পথরোধ, জখম ও ককটেল বিস্ফোরণ করে তারা। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়াতে মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামুনের দায়েরকৃত মামলার তিন আসামি করা হয়েছে আধুনগর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাওলানা ইসহাকের ছেলে মাওলানা শামীমকে। যিনি ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করার পর থেকে চোখে কম দেখতেন। এরপর চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসা থেকে ১৯৯০ সালে কামিল পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে চিরতরে হারিয়ে ফেলেন চোখের দৃষ্টিশক্তি।

মাওলানা শামীম বলেন, মামলার উল্লেখিত সময়ে আমি ঘরে অবস্থান করছিলাম। আর মামলায় উল্লেখ করা ককটেল আমি জীবনেও দেখিনি। আর বিস্ফোরণের প্রশ্ন তো আসে না। কারণ আমি চোখে দেখি না। নিজে নিজে চলাচল করতে পারি না। সেখানে আমার বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মিছিল করা, ককটেল ফাটানো এগুলো সব গায়েবি কথা, যা কখনো আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমি বেশির ভাগ আমার ভাতিজা হেলালের সহযোগিতা নিয়ে চলাচল করি।

অন্ধ শামীমের ভাতিজা হেলাল বলেন, আমার চাচাকে আমার জন্মের পর থেকে অন্ধ হিসেবে দেখছি। আমি বড় হওয়ার পর নিয়মিত চাচাকে হাতে ধরে চলাচলে সহযোগিতা করি। আর এই ব্যক্তি মিছিল করে ককটেল ফাটাবে সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মাওলানা শামীমের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, আমি আমার স্বামীকে বিয়ের পর থেকে অন্ধ হিসেবে পেয়েছি। যিনি একজন সহজ সরল মানুষ। ওনার মতন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা এই মামলা প্রত্যাহার চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, মাওলানা শামীম একজন অন্ধ মানুষ। যিনি অন্যজনের সাহায্য ছাড়া মসজিদে পর্যন্ত আসতে পারেন না। সেখানে পুলিশের এসব কথা অবান্তর। আসলে তারা বিরোধী দলের রাজনীতিকে দমিয়ে রাখতে মাঝে মধ্যে এসব আজগুবি গল্প সাজিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করে। আর এসব গায়েবি মামলায় সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হয়।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, মামলার বাদি তো আমরা নই। আমরা কেবল মামলা নিয়েছি। আর যতটুকু জানি লোকটা জামায়াতের নেতা। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই মামলা আছে। তবে তিনি অন্ধ কি না আমরা নিশ্চিত নই। এরপরও যখন আপনি জানিয়েছেন, আমরা তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবো।

উল্লেখ্য, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠা, আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ আটককৃত সব নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামার মুক্তি এবং সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন উপজেলা জামায়াতের সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এরপর একই দিন রাতে বিস্ফোরণ আইনে জামায়াতের উপজেলা আমির মো: আসাদুল্লাহসহ ছয়জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ৮০-৯০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/782608