৮ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ১০:১৫

পানিতে ভাসছে সিলেট নগরবাসীর চরম ভোগান্তি

টানা তিন দিন মুষলধারে বৃষ্টিতে পুরো সিলেট বিভাগীয় নগরী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নগরীর বেশিরভাগ এলাকাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক, বাসাবাড়ি, দোকান পাট, মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় পানিতে একাকার। পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও। অভিজাত্য এলাকা নামে খ্যাত পুরো উপশহর এলাকার মানুষ পানিবন্দী।

গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত তিন দিন ধরে সিলেটে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। শুক্রবার রাত থেকেই পানি ঢুকতে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। শনিবার সকালের মধ্যে তলিয়ে যায় নগরের বেশিরভাগ এলাকা।

গতকাল শনিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পানিও। নগরের অন্যতম উঁচু এলাকা শাহী ঈদগাহ। শুক্রবার রাতেই এই এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। এই এলাকার বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, রাতেই বাসায় পানি ঢুকেছে। সময় সময় পানি বাড়ছে। এ নিয়ে চলতি বছরে তিনবার ঘরে পানি ঢুকলো।শাহি ঈদগাহর মতো নগরের উঁচু এলাকা টিলাগড়, মেজরটিলা এলাকারও অনেক বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে। আর নিচু এলাকার অনেক রাস্তায় কোমর পানি হয়ে গেছে। পানিতে নিচতলা তলিয়ে গেছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এতে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।

এই হাসপাতালের চিকিৎসক অরূপ রাউৎ জানান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এবং সকল ছাত্রাবাসের নিচতলা অবধি পানি উঠে গেছে। হাসপাতালের সামনের সড়কও জলের নিচে। হাঁটু পানি ভেঙেই ডাক্তাররা ডিউটিতে এসেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমএজি ওসমানী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাজলশাহ, শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, সাগরদিঘীরপাড়, বাগবাড়ি, কানিশাইল, লামাপাড়া, লালা দিঘিরপাড়, মাছুদিঘিরপাড়া, বাদামবাগিছা, শাহপরান, কুয়ারপাড় উপশহর, সোবহানীঘাট, যতরপুর, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, কালিঘাট, কামালগড় ও দক্ষিণ সুরমার পিরোজপুর লাউআই, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে বাসাবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজিব হোসাইন জানান, গত শুক্রবার সকাল ৬ টা থেকে শনিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৩৫৭.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০২ মিলিমিটার।

নগরের পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে কোমড় পর্যন্ত পানি জমেছে বলে জানা গেছে। ফলে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নগরের শাহজালাল উপশহর এলাকার বাসিন্দা এম জে এইচ জামিল বলেন- আমরা একটি ভবনের ৪ তলায় থাকি। কিন্তু নিচ তলায় রাতে পানি ঢুকে পড়েছে। এর বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আমাদের পাড়ার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সিলেট মহানগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ফলে বার বার নগরবাসীকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি কমলে পানি নেমে যাবে। তিনি বলেন, ড্রেন নালা পরিষ্কার রাখতে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। এছাড়া সুরমা নদী খনন করানো জরুরি।

https://www.dailysangram.info/post/537447