৮ অক্টোবর ২০২৩, রবিবার, ১০:১২

সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৭ জন

গেলো সেপ্টেম্বর মাসে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬৫১ জন। একই সময়ে রেলপথেও ৪৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত ও ২৬ জন আহত হয়েছেন। এই মাসে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। এতে ২৮ জন নিহত, চারজন আহত এবং তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৪৬৭টি দুর্ঘটনায় ৪৯৬ জন নিহত এবং ৬৮১ জন আহত হয়েছেন।

সড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। ১৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭২ জন নিহত এবং ১০৭ জন আহত হয়েছেন। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ, নিহতের ৪২ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং আহতের ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ।

গতকাল শনিবার বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথ দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৮ জন নিহত, ১১২ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে সিলেট বিভাগে। এ বিভাগে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৯, আহত হয়েছেন ১০৬ জন।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন পথচারী, ৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৫ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ৭৪ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, দুই জন সাংবাদিক, দুই জন চিকিৎসক, তিন জন মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন দুই জন পুলিশ সদস্য, একজন বিজিবি সদস্য, একজন সেনাবাহিনী সদস্য, একজন নৌ বাহিনী সদস্য, দুই জন চিকিৎসক, তিন জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুই জন সাংবাদিক, ১০৭ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৫৮ জন পথচারী, ৪৩ জন নারী, ৩৪ জন শিশু, ২৮ জন শিক্ষার্থী, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, আট জন শিক্ষক এবং সাত জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংঘঠিত ৫৩৪টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

মোট দুর্ঘটনার ৬২ দশমিক ১৮ শতাংশ গাড়ি চাপায়, ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ৯১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বিভিন্ন কারণে এবং শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ সংঘঠিত হয়েছে চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৭ দশমিক ৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবং শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ
ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। তাদের মতে, ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ এবং ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং এসব যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে অবাধ চলাচলের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

সংস্থাটি বলছে, সড়ক-মহাসড়কে ‘রোড সাইন বা রোড মার্কিং’ ও ‘সড়ক বাতি’ না থাকার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও রাতের বেলা যানবাহনে অবাধ ফগ লাইট ব্যবহারও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

চলতি বর্ষায় সড়ক-মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি; যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণত; উল্টোপথে যানবাহন চালানো ও সড়কে চাদাঁবাজি; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

https://www.dailysangram.info/post/537474