৭ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার, ১২:৪৮

ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ

রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র। দিন-দুপুরেও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ। পুলিশের কার্যকর ভূমিকা না থাকায় ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় তারা। যদিও ছিনতাইকারীদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবশেষ গত ২ অক্টোবর রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা মো. শহিদুল্লাহকে (৩৮) বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে কুপিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী। পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল এক বছরে নগরীতে ছিনতাই হয়েছে ১৭৬টি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসে রাজধানীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন।
ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই নীরবে ছিনতাই হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে ছিনতাই বেশি হয়। বিভিন্ন সড়কের নির্জন এলাকা, ফুট ওভারব্রীজ, ফ্লাইওভারে চলাচলকারীরা টার্গেট বেশি। রাতে ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা মোটারসাইকেল ও সিএনজি অটো রিকশা থামিয়ে চালক এবং যাত্রীদের টাকা এবং মালামাল ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। এছাড়াও হাতিরঝিলের দুই পাশের সড়কে চলাচলকারীরা ছিনতাইকারীদের টার্গেটে থাকে। রাতে নির্জন স্থান দিয়ে সিএনজি অটো রিকশা ও পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা ঝুকিপূর্ণ। ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে পথচারীদের কাছ থেকে অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ অর্থ, গহনাগাটি, মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র অবলীলায় নিয়ে যায়। ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গেছে যে, পথে-ঘাটে কেউই নিরাপদ বোধ করছে না। তবে ছিনতাইয়ের সব ঘটনায় মামলা হয় না বিধায় পুলিশের কাছে প্রকৃত পরিসংখ্যানও নেই। ছিনতাইয়ের সাথে যুক্ত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে সিএনজি অটো রিকশা ও বাসের চালক হেলপারের বিরুদ্ধেও। বাস চালকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ছিনতাই এবং কখনো কখনো শ্লীলতাহানির ঘটনাও ঘটেছে। এ প্রসঙ্গে পকেটমারের কথাও বলা যায়। রাতে গ্যাং ছিনতাই বেশি হচ্ছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক নজরদারীর কারণে কিছুদিন আগেও এধরনের উপদ্রব থেকে খানিকটা মুক্তি পেয়েছিলেন রাজধানীবাসী। কিন্তু আবারও এ ধরনের ঘটনা বেড়েছে।

পুলিশের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছিনতাইকারীদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন বস্তি এলাকার বাসিন্দা। অনেকে আছেন ভাসমান। আবার ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ছিনতাইয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন অনেকে। ছিনতাই করে আবার নিজের এলাকায় গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। রাজধানীর একেক এলাকায় ছিনতাইয়ের ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমন, বিমানবন্দর সড়কে বেশির ভাগ ছিনতাই হয় পুলিশ পরিচয়ে। পুলিশ বলছে, রাজধানীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুব ভোরে এবং গভীর রাতে নির্জন এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বাড্ডা ও ভাটারা, মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এছাড়া শাহবাগ, মগবাজার, রমনা পার্ক, মালিবাগ রেলগেট, চাঁনখারপুল, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। রাজধানীর হাজারীবাগ এবং মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান, ফার্মগেট, কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী এলাকায় খুব ভোরে বা নির্জন রাস্তায় সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শ দেয় পুলিশ। তবে সম্প্রতি হাতিরঝিল, গুলশান-১ নম্বর গোল চক্কর ও বনানী এলাকায়ও ছিনতাই বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গত সোমবার সন্ধ্যায় উত্তরায় আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের এক আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকায় ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় ছিনতাই বেড়েছে। এসব ছিনতাইয়ের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে, রাজধানীর পৃথক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজন কথিত আকাশ গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে চাপাতি, ছুরি, চাকু, ক্ষুরসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র জব্দ ও মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। সোমবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার র‌্যাব এসব তথ্য নিশ্চিত করে। র‌্যাব-২-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি শিহাব করিম জানান, সম্প্রতি কিশোর অপরাধীদের সঙ্গে জড়িত সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা মাদকাসক্ত হওয়ায় মাদকের টাকা জোগাড় করার জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীর বছিলা ও এর আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের দাপট বেড়ে যাওয়ায় জনমনে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে। এসব অপরাধের অভিযোগে থানায় একাধিক জিডি ও মামলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর ও ধানম-ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আকাশ গ্রুপের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। পৃথক একটি অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে আরো ১৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদাবরের বেড়িবাঁধ এলাকায় বেসরকারি চাকরিজীবীকে কুপিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার ওহিদুল ইসলামের (২৫) দুইদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন আদাবর থানার এসআই মো. নূরুজ্জামান। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরী তার দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২ অক্টোবর রাজধানীর আদাবরের বাসিন্দা মো. শহিদুল্লাহকে (৩৮) বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে কুপিয়ে ২০ হাজার টাকা নিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী।

https://www.dailysangram.info/post/537350