৪ অক্টোবর ২০২৩, বুধবার, ১০:৩২

বদলে যাচ্ছে স্কুলের পাঠদান কৌশল

-২০২৫ সালের মধ্যে সব শ্রেণীতেই নতুন শিক্ষাক্রম

আগামী শিক্ষাবর্ষে আরো তিন শ্রেণীতে যুক্ত হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে বদলে যাচ্ছে পাঠদান কৌশলও। এ লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ পাবেন সব শিক্ষক। যদিও এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণীতে শুরু হয়েছে এই শিক্ষাক্রম। বর্তমানে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এই তিন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার পর এখন নতুন করে আগামী শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতেও চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। নতুন এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের নিকট সহজ ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে শিক্ষকদেরও দেয়া হবে প্রশিক্ষণ।
সূত্র মতে, ২০২৩ ও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মোট ছয়টি শ্রেণীর নতুন শিক্ষাক্রম চলমান রাখতে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪ লাখ ২৫ হাজার ২৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আর এই প্রশিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে প্রাক্কলিত ব্যয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০৬ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। সূত্র আরো জানায়, প্রথম ধাপে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে শেষ হবে ৭ তারিখের মধ্যে। এরপর ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষকরা।

এ দিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, নতুন শিক্ষাক্রমে দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় পাঠদান শুরু হয়েছিল চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই। শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং বাকি শ্রেণীগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এই শিক্ষাক্রম চালুর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঠিক ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার সাথে পঠন-পাঠন সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য শুরুতেই তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। এতে শিক্ষাক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রমের তদারকি করে এনসিটিবি।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের শুরুতে চলতি বছরের গোড়ার দিকেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রতিষ্ঠান মাউশি ও এনসিটিবি। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের শুরুতে বদলে যাওয়া শিখন ও মূল্যয়ন কাঠামোয় দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ নেন দেশের মাধ্যমিক স্তরভিত্তিক শিক্ষালয়গুলোর দুই লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক। নতুন শিক্ষাক্রমের এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে বিভিন্ন কারণে তখন বাদ পড়েছিলেন প্রায় এক লাখ ২০ হাজারের মতো শিক্ষক। অবশ্য নতুন উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পাবেন বাদ পড়া শিক্ষকরাও। অপর দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে দু’ধাপে নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ৪০৬ কোটি ৯২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন চার লাখ ২৫ হাজার ২৫০ জন শিক্ষক। মাউশি থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হলে শিক্ষকদের এসব ক্লাসের পাঠ্যবইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। যেহেতু আসছে বছর নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠের আওতায় আসবে দ্বিতীয়, অষ্টম এবং নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সেজন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এসব শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ওপর। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বিষয়গুলোর তদারকি করছে মাউশি।

এ ছাড়াও অধিদফতর চলতি অক্টোবরের ১৮ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে বিগত প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পড়া এসব শিক্ষককে শেখানোর কাজে অধিদফতরের ব্যয় হবে ১০৬ কোটি টাকা। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাজেট প্রস্তাবে এ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ১৯ হাজার ২০০ টাকা। বাদ পড়া শিক্ষকদের নতুন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচির ওপর। এ ছাড়াও এবারের নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেয়া হচ্ছে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন-পঠন ও মূল্যায়নকে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়েও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হওয়ার কথা রয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। আর দু’টিই থাকছে পরবর্তী শ্রেণীগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রমে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হয়েছে এখনকার মতো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও, যা শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমে।

এর আগে গত বছরের মে মাসে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে পথরেখা দেয় এনসিটিবি। এতে বলা হয়, মাধ্যমিক স্তরে ৬৪ জেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে মূল প্রশিক্ষক বা মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা হবে।

তারা আবার প্রতিটি উপজেলায় প্রতি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবেন। নতুন শিক্ষাক্রম ও তার বাস্তবায়নের নতুন রূপরেখায় বলা হয়েছে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণী; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণীতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণীতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করবে সরকার। নতুন নিয়মে এখনকার মতো করে হবে না এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা হবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষ শেষে বোর্ডের অধীনে এই পরীক্ষা হবে। এরপর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে।

এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) স্কিম শাখার পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী জানিয়েছেন, আমরা বাদ পড়া সব শিক্ষককে এবারের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি, এবারের প্রশিক্ষণের ফলে আর কোনো শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রশিক্ষণের বাইরে থাকবেন না। এ ছাড়াও যেহেতু আগামী বছর নতুন শিক্ষাবর্ষে আমাদের অষ্টম ও নবম শ্রেণী নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসছে। সেজন্য আমরা পরবর্তী ক্লাসগুলোর প্রশিক্ষণ চলতি বছরের মধ্যেই শেষ করব।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/781634