৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:১৮

ভিসানীতিতে উদ্বিগ্ন সরকারি কর্মকর্তারা

অনেকের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোতে

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। এ বিষয়ে ভেতরে ভেতরে কথা বললেও কেউ সামনা সামনি কথা বলছেন না। নিজেদের নিরাপদ রাখতে ভিসানীতির পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো দিকেই যাচ্ছেন না বেশির ভাগ কর্মকর্তা। যেসব কর্মকর্তা কিছুদিন আগেও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কথা বলেছেন তারাও ভিসানীতির পর নীরবতা পালন করছেন। এ বিষয়ে কথা উঠলেই তাদের চেহারায় ফুটে উঠছে উদ্বেগের ছাপ।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান নয়া দিগন্তকে বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে চাপের কোনো কারণ আমি দেখি না। ভিসানীতি তাদের ওপর প্রভাব ফেলবে যারা নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করবে। গণকর্মচারীরা সংবিধান-আইন, বিধিবিধান ও আরপিও মেনে কাজ করেন। যদি কোনো কর্মচারী এর বাইরে যান সেটা পরে দেখা যাবে যে কী ধরনের প্রভাব পড়ে।
ভিসা নীতির প্রভাবের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে একটা ভয়-ভীতি থাকতে পারে কিংবা এ ধরনের যারা সমাজের উঁচুস্তরের মানুষ আছেন তাদের মধ্যে থাকতে পারে। কারণ তাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে থাকে। ওনারা অনেকে ঘুষ-টুষ খেয়ে দুর্নীতি করে বিদেশে বাড়ি-ঘর করেছেন। ওনাদের একটা ভয় থাকতে পারে যে ওনাদের যদি ভিসা না দেয় তাহলে বাড়িঘরটা দেখভাল করবেন কিভাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে যেসব জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দায়িত্বে রয়েছেন তারাই বেশি উদ্বিগ্ন। কারণ তারাই রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও গত নির্বাচনগুলোতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারাও রয়েছেন উৎকণ্ঠার মধ্যে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র যদি আগের নির্বাচনগুলোকে আমলে নিয়ে ভিসানীতি প্রয়োগ করে তাহলে তারাও ঝামেলায় পড়বেন।

২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে যেসব ডিসি রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তারা এখন যুগ্মসচিব। তাদের প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কর্মরত। কেউ কেউ বিভাগীয় কমিশনারও হয়েছেন। সেই নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী ইউএনওদের কয়েকজন উপসচিব হলেও বেশির ভাগই সিনিয়র সহকারী সচিব পদে আছেন। কেউ কেউ কয়েকটি জেলায় এডিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

সচিবালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কাদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করেছে এ বিষয়ে জানতে তাদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। একাধিক অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেরই সন্তান আমেরিকায় পড়ালেখা করছে। অনেকের স্ত্রী-সন্তান বসবাস করছে সেখানে। বাড়ি গাড়িও রয়েছে অনেক কর্মকর্তার। ফলে তাদের মধ্যে টেনশন বেশি।
তবে নির্ভারও রয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, আমারতো আমেরিকায় কিছু নেই। হয়তো অনেকে আমেরিকা যান বা যেতে চান তাদের টেনশন থাকাটা স্বাভাবিক। অনেকের স্ত্রী-সন্তান থাকে সে দেশে। আমাদের এসব নিয়ে ভাবনা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর গত ২২ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে বলা হয়, তারা বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, বিচার বিভাগের সদস্য এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য। যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে, সেসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। এর আগে ২৫ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/781418