১৩ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ৩:৫২

এই বাজেট দেশের গোটা অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

বাজেটে যে সব অযৌক্তিক প্রস্তাব করা হয়েছে তা অবিলম্বে পূনঃর্বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান

২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংকে আমানত রাখা ১ লক্ষ টাকার উপর ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক ধার্য করাসহ বাজেটে যে সব অযৌক্তিক প্রস্তাব করা হয়েছে তা অবিলম্বে পূনঃর্বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৩ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ব্যাংকে আমানত রাখা ১ লক্ষ টাকার উপর ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক ধার্য করার প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং জনগণের ওপর সুস্পষ্ট জুলুম। এই বাজেট দেশের গোটা অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত।

জাতীয় সংসদে সরকারের উত্থাপিত বাজেট দেশে-বিদেশে সকল মহলেই তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছে। দেশের গোটা অর্থনীতির উপর প্রস্তাবিত বাজেটের ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিরূপ প্রভাব ইতোমধ্যেই দেশবাসী লক্ষ্য করছে। প্রস্তাবিত বাজেটের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় চাল, ডাল, চিনি, মাছ, গোশত, মসল্লা, তেলসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। চালের দাম প্রকার ভেদে প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৭০ টাকা এবং চিনি প্রতি কেজি ৭০/৭৫ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যের কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে।

শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপের কারণে ব্যবসায়ী মহল দুশ্চিন্তায় পড়েছে। ভ্যাট আইন এবং হিসাব-নিকাশ পদ্ধতি সম্পর্কেও তাদের আপত্তি আছে। তাদের পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি পণ্য ক্রয়ের হিসাবেও ভ্যাট রিটার্ণে দেখাতে হবে। সাধারণ হোটেল-রেস্তোঁরায় খাবার খেলে বর্তমানে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু ১লা জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং বিক্রয় মূল্যও বাড়বে। এতে ভোক্তা জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দেশে মুদ্রাস্ফীতিও বাড়বে।

বর্তমানে বিদ্যুৎ বিলে শতকরা ৫ ভাগ ভ্যাট দিতে হয়। ১লা জুলাই থেকে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট দিতে হবে। তখন বিদ্যুতের মূল্য আরো বাড়বে এবং গ্যাসসহ এলপি গ্যাসের দামও বাড়বে। ফলে জনগণের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।

ব্যাংকে আমানত রাখা ১ লক্ষ টাকার উপর ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক ধার্য করার ফলে সাধারণ দরিদ্র জনগণ ব্যাংকে টাকা রাখার উৎসাহ হারাবে। এ নীতি সঞ্চয় নীতির পরিপন্থী।

২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে এ সরকারের নৈতিক এবং সাংবিধানিক বৈধতা চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণ যে সরকারকে নির্বাচিত করেনি, সেই কর্তৃত্ববাদী সরকারের সকল কার্যক্রম আজকে গণবিরোধী বলে প্রমাণিত হচ্ছে। সরকারের পদক্ষেপগুলো দেখে মনে হয় সরকার জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং জনগণকে শাস্তি দিচ্ছে।

দেশের দরিদ্র জনগণের স্বার্থ ও দেশের সার্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট আরোপ এবং ব্যাংকে আমানত রাখা ১ লক্ষ টাকার উপর ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক ধার্য করার অন্যায় ও অযৌক্তিত প্রস্তাবসহ প্রস্তাবিত বাজেটের জনস্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবসমূহ অবিলম্বে পূনর্বিবেচনা করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”