২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবার

পিলখানার নৃশংস ঘটনার বিচার ও নিহতের স্মরণে জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বোভৌমত্বকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বোভৌমত্বকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। বিডিআর বিদ্রোহের নামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে চৌকস ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। আজকের দিনে সেই শহীদ বীর সন্তানদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। জাতির জন্য এটি একটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। পিলখানা হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এটা আধিপত্যবাদী শক্তির বাংলাদেশকে করদরাজ্য বানানোর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ। পাক-ভারত উপমহাদেশে আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র হবে ভারত তা কোনদিনই মেনে নেয়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরে কংগ্রেসের একটি মিটিং-এ অফিসিয়ালি জওহরলাল নেহেরু স্পষ্ট করে বলে আপাতত আমরা এটা মেনে নিচ্ছি। তার অর্থই হচ্ছে স্থায়ীভাবে তারা কখনই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট ভূখন্ড মেনে নিতে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন দেশ ঠিকই পেয়েছি কিন্তু ভারতীয় আগ্রাসন থেকে আজও মুক্ত হতে পারিনি। এই আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে তার করদরাজ্য বানানোর জন্য সকল ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে ২০০৯ সালে পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের মর্মান্তিক নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবি ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মু. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম, অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, সহকারী সমাজ কল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশকে একটি তাবেদার রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চাই। এজন্যই পিলখানার এই ঘটনা সংগঠিত করা হয়েছিল। বিডিআর বিদ্রোহের এই ঘটনাকে পরিকল্পিতভাবে জয়েন্ট প্রজেক্ট বা যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই দু’টি শক্তির একটি হলো এ দেশীয় সহযোগী শক্তি এবং অপর শক্তি হলো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটি বিশেষ সংস্থা। তারা এখনও এদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেই চলেছে। যার প্রমাণ তাদের এ দেশীয় দোশর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ মিডিয়ায় প্রকাশ্যেই বলছে ৭ই জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে ভারত আমাদের পাশে ছিলো বলেই আমরা বিজয়ী হয়েছি। মূলত আওয়ামী লীগ ভারতকে বিদেশি শক্তি মনেই করে না। অথচ আধিপত্যবাদীদের ষড়যন্ত্রে দেশের সীমানা আজ অরক্ষিত। এই আগ্রাসী শক্তি আমাদের অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা সহ সকল ক্ষেত্রে গোলামী বা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ করতে চায়। ফলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে দেশপ্রেমিক জনতাকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০০৬ সালে পল্টন ময়দানে লগি-বৈঠা দিয়ে জনগণকে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী কায়দায় রাজনীতিকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় অল্প সময়ের ব্যবধানেই রাষ্ট্র ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় নৃশংস হত্যাকান্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারকে হত্যা করা হয়। পিলখানা হত্যাকান্ডের মাধ্যমে একদিকে এদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীকে দূর্বল করে ফেলার অপচেষ্টা করা হয়েছে। অপরদিকে এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে এদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ধ্বংস করে দিয়ে আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সীমানাকে অরক্ষিত করে দেয়ার নীল নকশা আঁকা হয়েছে। এদেশের দেশপ্রেমিক জনগণ আধিপত্যবাদের গোলামীকে কখনোই বরদাশত করবে না। তাই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশপ্রেম ও ইসলামের সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে।

আব্দুস সবুর ফকির বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ১৫ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর পায়নি। সেই দিন দরবার হলে আসলে কি হয়েছিল? বিডিআরের এই প্রোগ্রামে মূলত প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু তিনি গেলেন না কেন? অল্প সময়ের মধ্যে দেশের সকল মেধাবী অফিসারকে বিডিআরে বদলী করে কেন সবাইকে একত্রিত করা হলো? এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট আজও জনম্মুখে আসতে দেওয়া হয়নি কেন? গণতান্ত্রিক দেশে সকল নাগরিকদের এ তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। এ তথ্য প্রকাশিত হলেই এই নৃশংস ঘটনার আসল রহস্য জাতির কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়বে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ২০০১ সালের নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবারের স্লোগান দিয়ে বিডিআর রৌমারি সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিয়ে যে বীরত্ব দেখিয়েছিল আধিপত্যবাদী শক্তি তারই নিকৃষ্ট প্রতিশোধ নিয়েছে ২০০৯ সালে পিলখানায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে। এটা স্বাভাবিক কোনো হত্যাকান্ড ছিলো না। পিলখানায় দেশপ্রেমিক ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও পার্শ্ববর্তী শক্তি বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। তারা ভেবেছিল এসব দেশপ্রেমিক সেনা অফিসার বেঁচে থাকলে এদেশে তাদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করা যাবে না।