৩ জুলাই ২০১০, শনিবার

জামায়াতের দোয়া দিবসে মকবুল আহমাদ

অবিলম্বে নেতবৃন্দকে মুক্তি দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলন

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমদ বলেছেন, যারা জীবনে ভাংচুৃর অগ্নিসংযোগে বিশ্বাস করেননি তাদেরকে গাড়ী ভাংচুরের মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। একসাথে ১৬ দিনের রিমান্ড ইতিহাসে দেখা যায়নি। এক মাঘে শীত যায় তা চিন্তা করবেন না। জুলুম নির্যাতন করে ইসলামী আন্দোলন শেষ করতে পারবেন না। আল্লাহরও পরিকল্পনা আছে। ইতিহাসে দেখা যায়, যারা ইসলামী আন্দোলন শেষ করতে চেয়েছিল তারাই শেষ হয়ে গেছে। অবিলম্বে জামায়াত নেতবৃন্দকে মুক্তি দেয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এমন কী বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে জালিম সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

জামায়াতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর আল ফালাহ মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরী আয়োজিত দোয়ার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী দোয়া দিবস পালন করা হয়। দোয়ার মাহফিলে মহান আল্লাহর কাছে আওয়ামী সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিচার চেয়ে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। ঢাকা মহানগরী জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম। দোয়া পরিচালনা করেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সুবহান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, ডা. শফিকুর রহমান, সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা এটিএম মাসুম, মহনগরী জামায়াতে সহকারী সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম বুলবুল, ডা. রেদওয়ানুল্লাহ শাহেদীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দ।

মকবুল আহমদ বলেন, সরকার ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যে মামলায় নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হয়েছে মহামান্য আদালত সে মামলায় তাদের প্রত্যেককে জামিন মঞ্জুর করেছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নতুন করে ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে রিমান্ডে নিয়েছে। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের কথা বলে আর সরকারে গেলে গণতন্ত্র নিয়ে ষড়যন্ত্র করে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, গর্ত খুরবেন না, একদিন সে গর্তে নিজেদেরকেই পড়তে হবে। আপনারা যা শুরু করেছেন তা বিরোধী দলের জন্য যত না ক্ষতিকর, তার চেয়ে সরকারই অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সকল বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কতিপয় মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় তাদেরকে ১৬ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে এক মাঘে শীত যায় না। তিনি ডিএমপি কর্তৃক রাজধানীতে মিছিল মিটিং প্রজ্ঞাপন সম্পর্কে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য রাজনৈতিক নেতাকেও হার মানিয়েছে। রাজনীতি করতে চাইলে ইউনিফর্ম খুলে রাজপথে আসুন, জনগণের কাতারে শামিল হন। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। জুলুম-নির্যাতন কখনই কাউকে স্থায়িত্ব দিতে পারেনি। অতীতে বাকশাল গঠন করে শেষ রক্ষা হয়নি। এবারও শেষ রক্ষা করতে পারবেন না।

তিনি আরো বলেন, আমরা এ সরকারের ১৬-১৭ মাসে তেমন কোন কর্মসূচি দেয়নি। সরকার ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য জামায়াত-শিবিরের ওপর দলন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু এ দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে জামায়াতকে নির্মূল করতে পারবেন না। অবিলম্বে জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ সকল বন্দিদের মুক্তি দিন। জুলুম চালিয়ে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে পারবেন না। অতীতে যারা কোন শক্তিকে নির্মূল করতে চেয়েছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। তিনি সরকারকে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পন্থা অনুসরণের আহবান জানান।

মাওলানা আব্দুস সুবহান বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রাজনৈতিক দল। তাই সরকারের উচিত এই সুশৃংখল শক্তিকে লায়াবিলিটি মনে না করে এ্যাসেট মনে করা। কিন্তু সরকার জামায়াতকে নেতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছে। তারা এ সংগঠনকে উৎখাত করতে চায়। কিন্তু ফুঁ দিয়ে দ্বীনের এ প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন জামায়াতের প্রতি জুলুম করা হচ্ছে। মজলুমের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ থাকে। যে অবস্থা চলছে তাতে জনগণের কাঠগড়ায় এই জালেমদের বিচার হওয়া উচিৎ। অতীতে জুলুম করে তারা টিকতে পারেনি। তারা সাবেক আমীরে জামায়াত গোলাম আযমের নাগরিকত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু এ ইস্যুতে তাদের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছে। তারা নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে দুর্ব্যবহার করছে। কিন্তু জাতি এদেরকে ক্ষমা করবে না। তিনি নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

এ টি এম আজহার বলেন, সরকার করদ রাজ্য বানানোর নীল নকশাকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর দলন-পীড়ন চালাচ্ছে। সরকার দেশ ও জাতিসত্তা বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু জীবন থাকতে দেশের মানুষ স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অন্যের হাতে তুলে দেবে না। তিনি আরো বলেন, সরকার দুষ্টের লালন ও শিষ্টের দমন করছে। তারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও চাপাতি বাহিনীকে গ্রেফতার না করে উল্টো জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করছে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, গ্রেফতার নির্যাতন চালিয়ে কোন লাভ হবে না। প্রয়োজনে লাখ লাখ জামায়াত শিবির নেতা-কর্মী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে প্রস্তুত। সরকার যা শুরু করেছে তাতে জেলখানা ও বাহির এক হতে বেশী সময় লাগবে না। তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের প্রধানের রিমান্ডের দৃষ্টান্ত আওয়ামীলীগ সরকার প্রথম স্থাপন করেছে। তারা নেতৃবৃন্দকে একাধারে ১৬ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি দিন। জুলুম-নির্যাতনের পথ পরিহার করুন। আগামী দিনের জন্য সতর্ক থাকুন। আগামীতে রিমান্ডের সময়সীমা আরো দীর্ঘ হতে পারে।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, এ সরকারের কাছে গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ আলাদা। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে Of the people, For the people, By the people. কিন্তু আওয়ামী গণতন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে Of the party, For the party, By the party, মূলত এটি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান। তারা নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে দলন-পীড়ন চালাচ্ছে। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে এবং আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে চোখের পানিতে নেতৃবৃন্দের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ এমপি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, কোন প্রকার ওয়ারেন্ট ছাড়াই নেতৃবৃন্দকে অন্যায় ও জোরপূর্বকভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্বে এমন নজীর কোথাও নেই। যে মামলার অজুহাতে গ্রেফতার করা হয়েছে আদালত সে মামলায় জামিন দিলেও পুনরায় মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার প্রতিহিংসা চারিতার্থ করছে। শান্তির দূতদের বিরুদ্ধে গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা দিয়ে সরকার লজ্জাহীনতার পরিচয় দিয়েছে। তারা মহানগর আমীরের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে। কিন্তু তার কিছু হলে গোটা রাজধানী অচল করে দেয়া হবে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে প্রয়োজনে কঠোর ও বৃহত্তর কর্মসূচি দিয়ে নেতৃবৃন্দসহ সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি নিশ্চিত করে সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে। মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, জিহাদ, হিজরত ও শাহাদাত-ই মুমিন জীবনের মোক্ষম লক্ষ্য। তাই এ পথ থেকে কোন মুমিন বিচ্যুত হতে পারে না। তাই দোয়া ও নেতৃবৃন্দ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে।

কার্টেসীঃ দৈনিক সংগ্রাম