১৮ জুন ২০২৩, রবিবার

কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন অনুষ্ঠিত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশন ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা বিস্তারিত আলোচনার পর নিম্নোক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে।

“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা লক্ষ্য করছে যে, ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। ঐ নির্বাচনটি এতই সাজানো ছিল যে, কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে ১০৭ ভাগ ভোট কাস্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ বছরে ১৭৩ দিন হরতাল পালন করে। কঠোর আন্দোলন, সংগ্রাম, জনগণের জীবন দান ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির পর কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে বর্তমান এই ফ্যাসিবাদী সরকার ২০১১ সালে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ আদালতের নির্দেশনা ছিল পরপর আরো দুটো নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে। কিন্তু কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করার ফলে দেশে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়। আর তখন থেকেই দেশে একদলীয় ভোটারবিহীন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো প্রহসনে পরিণত হয়।

বর্তমান সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের এই কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার হরণ করে সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তারা তামাশায় পরিণত করছে।

দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষকসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। গণতান্ত্রিক দেশসমূহ অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা মনে করে, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই চলমান সংকট নিরসন হতে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল রাজনৈতিক দল, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ও আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে। সেই সাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।”