২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের ইউনিট দায়িত্বশীল সম্মেলন অনুষ্ঠিত

স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াতের নেতাকর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার গত ১৫ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনীতি, আইনের শাসন ধ্বংস করে দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষের মানবাধিকার, বাক-স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। শুধুমাত্র বিরোধী মতের কারণে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করছে। এই সরকার জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের উপরে গত ১৫ বছরে সীমাহীন দমন-নিপীড়ন, জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। এই স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য জামায়াতের নেতাকর্মীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে দেশের জনগণ ও আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলো মনে করে জামায়াত ছাড়া আওয়ামী স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন সফল হবে না। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রাজপথে আছে এবং স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে আয়োজিত ইউনিট সভাপতি-সেক্রেটারি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ, থানা আমীর, সেক্রেটারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

এটিএম মা'ছুম বলেন, আওয়ামী সরকার তাদের লুটপাট ও দুর্নীতির প্রধান বাঁধা মনে করে জামায়াতকে। তাই তারা নানান কৌশলে জামায়াতের উপরে জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে জামায়াতের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করে দিতে চাইছে। কিন্তু তাদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জামায়াত দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে টিকে আছে এবং ভব্যিষতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ। এদেশে ইসলামের প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী দেশি-বিদেশী বিভিন্ন চাক্রান্তে উত্তীর্ণ হয়েছে। মহান আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই অবৈধ আওয়ামী স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করতে হবে। ২১ ডিসেম্বর থেকে আমাদের ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছি , লিফলেট নিয়ে জনগণের দাঁড়ে দাঁড়ে যেতে হবে। আমরা মহান আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য কাজ করি, আমাদের হতাশার কিছু নেই। এদেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে ইসলাম সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। আধিপত্যবাদের আগ্রাসন বন্ধ হবে। জামায়াতের সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদেরকে চলমান আন্দোলনে অনুগত্যের সব্বোর্চ্চ নজির স্থাপন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে সকল পর্যায়ের জনশক্তিদের সজাগ ও তৎপর থাকতে হবে। সংগঠন সম্প্রসারণ ও মজবুতি অর্জনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছে। যেখানে মানুষের অধিকার থাকবে, কেউ বঞ্চিত হবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ একটি কমিশন। স্বৈরশাসনকে দীর্ঘ করতে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার আইনের কোন তোয়াক্কা না করে জামায়াতসহ বিরোধি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের উপরে জুলুম নিপীড়ন চালাচ্ছে। আমীরে জামায়াতসহ বিরোধী দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতাকে জেলে বন্দি করে রেখেছে। নির্বাচন বর্জনের জন্য আমরা ঢাকা মহানগরী দক্ষিন দশ লাখ লিফলেট বিতরণ করছি। সরকারের ভানুমতির খেলা নামক পাতানো একতরফা নীল নকশার এই নির্বাচন বর্জন করতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশী চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিতে হবে। কেন্দ্র ঘোষিত সকল কর্মসূচী যথাযথ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নির্বাচন বর্জনের লিফলেট জনগণের কাছে বিতরণ করতে হবে। শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে আমাদের ত্যাগ ও কুরবানীর নজরানা পেশ করতে হবে। ইকামতে দ্বীনের এই কাজকে এগিয়ে নিতে সকল ধরনের বাঁধা অতিক্রম করে ময়দানে ভূমিকা পালন করতে হবে।

এডভোকেট হেলাল উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি জুলুমের শিকার হয়েছে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমরা জামায়াতের শীর্ষ ১১ জন নেতাকে হারিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিথ্যা মামলা দিয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। মিথ্যা রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলায় আদালত রাতে কোট বসিয়ে ফরমায়েশি সাজা দিচ্ছে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, নেতৃত্বে একদল যোগ্য মানুষ আমাদের আজ বড় বেশি প্রয়োজন। সংগঠন সম্প্রসারণ ও নেতৃত্ব তৈরির জন্য ব্যাপক দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। চেইন অব কমান্ড বজায় রেখে পরিকল্পনা অনুযায়ী সংগঠনের পরিধি বৃদ্ধি ও মজবুতি অর্জনে ওয়ার্ড দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণে জামায়াতের প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে সবার আগে এগিয়ে যেতে হবে। সরকারের পাতানো নির্বাচন বর্জন ও জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করতে হবে।