১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের রুকন প্রার্থী ও সাবেক সদস্য শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত

দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদেরকে কুরআনের রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করতে হবে- মাওলানা এটিএম মা’ছুম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে রুকন প্রার্থী ও সাবেক সদস্য শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম। এতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার প্রমুখ।

মাওলানা এটিএম মা'ছুম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীকে মুয়ামালাতের বিষয়ে সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। কারণ ঈমান-আকিদা ও ইবাদতের সাথে মুআমালাতের যোগসূত্র অতি গভীর ও সুদৃঢ়। ইসলামী শরীয়তে অনেক দিক থেকেই মুআমালাতের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। মুআমালাত অধ্যায়টি শরীয়তে ইসলামীর একটি বিস্তৃত অধ্যায়। একজন মুসলমানের গোটা জীবনে মুআমালাতের বিধিনিষেধ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দরকার পড়ে। কারণ মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে চলতে হলে তাকে সবার সাথে ওঠা-বসা, লেনদেন করেই চলতে হয়। লেনদেনের মাধ্যমে জীবন যাপন করা ছাড়া কারো পক্ষে ঠিকমতো ইবাদত-বন্দেগি পালনও সম্ভব নয়। তাই ইসলামী শরীয়তে মুআমালাত ও লেনদেনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ পাকের হক এবং বান্দার হক দুইটির বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। মুআমালাতের বিধিনিষেধ মেনে চললে ইসলাম তার জন্য আলাদা পুরস্কার ও সওয়াবের ঘোষণা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে শুধু ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি, খিলাফাতের জন্যও সৃষ্টি করা হয়েছে। ইবাদাত ও খিলাফাতের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ইসলামী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। আপোষহীন চরিত্র ইসলামী আন্দোলনের বড় পুঁজি। জামায়াতের সাবেক শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়ে শাহাদাতের অমিয় সুধা পাণ করেছেন তবুও নিজ আদর্শে অটল ছিলেন। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি রয়েছেন, তবুও কারো সাথে আপস করেননি। শত জুলুম ও অত্যাচারের মাঝেও আমাদেরকে দৃঢ়ভাবে দ্বীনের এ মহান কাজকে আঞ্জাম দিতে হবে। ইসলামী আন্দোলন আমাদেরকে জাহান্নামের পথ থেকে জান্নাতের রাস্তায় ফিরে এনেছে। জাতিকে নেতৃত্ব শূন্যতার হাত থেকেও রক্ষা করেছে। আমরা এই কাফেলার সন্ধান না পেলে জাহেলিয়াতের অন্ধকার গহ্বরে নিমজ্জিত হতাম। জামায়াতে ইসলামী আমাদেরকে কুরআনের পথে আহ্বান করে জীবনকে আলোকিত করেছে। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য আমাদেরকে কুরআনের রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করতে হবে।

নগর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বাংলাদেশকে যারা কৃত্রিম ভাবে ভালোবাসে, তারা এই দেশকে তাদের পৈত্রিক স¤পত্তি মনে করে। এই দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে ঈমানী শক্তির প্রয়োজন তা এদের নেই। আমাদের বাংলাদেশ ইসলামের জন্য একটি উর্বর ভূখন্ড। এই দেশের সাধারণ মানুষের ইসলামের প্রতি ভালোবাসা দ্বীন বিজয়কে ত্বরাণি¡ত করবে। তিনি বলেন, সরকারের জুলুম শোষণ সীমা অতিক্রম করে গেছে, আমাদের নেতৃবৃন্দ সকল আইনি প্রক্রিয়া স¤পন্ন করে অনেক মাস-বছর পর কারাগার থেকে বেরোলে সাদা পোষাকে আবারো তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশাসনসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠান যেগুলো নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করার কথা, সবগুলোকে তারা দলীয়করণ করে ফেলেছে। বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী জনগণের দাবী আদায়ের জন্য ময়দানে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে এবং যাবে ইনশাআল্লাহ্। বর্তমান সরকারের অবস্থা খুবই শোচনীয়, একারণেই তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনের চিন্তা তারা করতেই পারছে না, ন্যুনতম একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের অবস্থা যে করুণ হবে তা তারা বুঝতে পারছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পিছপা থাকলে চলবে না, কুরআনের আলোকে পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করে সংগঠনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে আত্মস্থ করে সকল কাজ আঞ্জাম দিতে হবে। এছাড়াও পরিকল্পিত দাওয়াতী কাজ, মানবসেবাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। জনশক্তির সংগঠনকে জনগণের সংগঠনে পরিণত করতে হবে। তাই তৃণমূল পর্যন্ত আমাদেরকে সেবকের মন নিয়ে পৌঁছাতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের একমাত্র অভিভাবক আল্লাহর সাথে আমাদের নিবিড় স¤পর্ক স্থাপন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, আমলে জিন্দেগীতে আমাদেরকে এগিয়ে থাকতে হবে। কাল হাশরের ময়দানে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, আমরা কথা অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছি। আমাদেরকে দ্বীন বিজয়ের কাজে সক্রিয় থেকে আরও বলিষ্ঠ অবদান রাখতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের কর্মী হিসেবে আমরা শপথ করতে চাই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। সমাজের তৃণমূল থেকে সংগঠনের নেতৃত্ব তুলে নিয়ে আসার জন্য আমরা ভূমিকা রাখবো। সেই সাথে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করব। তিনি শহীদ নেতৃবৃন্দের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আল্লাহর পছন্দনীয় কাজে বেশী বেশী আত্মনিয়োগ এবং আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। মন মগজ ও চরিত্রকে ইকামাতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা এবং শপথের আলোকে জীবন পরিচালনা ইসলামী আন্দোলনের অপরিহার্য দাবী। রাসুল সা. ও সাহাবাদের আমল অনুযায়ী সমাজের সর্বস্তরে দাওয়াতী কাজ করতে হবে। জামায়াতের জনশক্তিদের দাওয়াতী কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে, যেন তা আমাদের নিত্যদিনের কাজ হিসেবে পরিণত হয়। সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ সকলের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত স¤পর্ক ও হৃদ্যতা আরো সৃদৃঢ় করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কাজে সকল ধর্মপ্রাণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।