৬ জানুয়ারি ২০১৭, শুক্রবার

পার্বত্য চট্রগ্রাম এবং আমাদের চিন্তাধারা

১. সম্পদ সম্ভাবনা আর সমূহ সমস্যায় সমাকীর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের এক দশমাংশ সার্বভৌম ভৌগোলিক এলাকা নিয়ে বিস্তৃত পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের সবচেয়ে হালকা জনসংখ্যা অধ্যুষিত অথচ বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ। দেশটির তিনটি পার্বত্য প্রশাসনিক জেলার সমন্বয়ে গঠিত এ অঞ্চলটির অধিকাংশ ভূমিই পাহাড় ও বনভুূমির অন্তর্ভূক্ত। উঁচু নিচু পাহাড়-পর্বত, পার্বত্য নদ-নদী, উর্বর উপত্যকা, দুর্গম ঘন চিরহরিৎ বনভূমি বৈচিত্রময় জনগোষ্ঠি অঞ্চলটিকে দান করেছে এক অনন্য নিসর্গ ও বৈচিত্রময়তা। সেখানে বসবাসরত সকল উপজাতি-বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী-হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানসহ তাবৎ জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশী নাগরিকের সার্বিক অধিকার ও ইজ্জতের সংরক্ষণ, নিরাপত্তা, সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা রক্ষা এবং সর্বোপরি জীবন-জীবিকার নিশ্চিয়তা বিধানে যথাযথ রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক ও সাংবিধানিক সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২. পার্বত্য-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীয় ও পশ্চাদপদ ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসহ দেশের সকল জনগণের সব ধরনের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।

৩. বাংলাদেশের কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূ-ভাগের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক 
অ-খণ্ডতা বিরোধী যে কোন ধরনের কর্মকান্ড ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী অপতৎপরতা কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হবে।

৪. দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, জাতীয় অখন্ডতা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে, পাহাড়ী এলাকায় জাতিগত দাঙ্গা ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে, আভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারে, প্রতিবেশি রাষ্ট্র বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হতে পারে, সর্বপরি বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে দেশ বঞ্চিত হতে পারে এমন সকল প্রকার তৎপরতা রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
৫. পার্বত্য জেলা গুলোর দিকে সুদৃষ্টি প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ী-বাংলাদেশীদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের দ্বারা অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নে সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
৬. পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাটি একটি জটিল সমস্যা হিসেবে চলে আসছে দীর্ঘকাল যাবত। ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সংঘটিত একটার পর একটা ঘটনা, মিমাংসার একটি যুক্তিসংগত ও উভয় পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য ফর্মূলা উদ্ভাবনের মাধ্যমে দীর্ঘকালীন ব্যর্থতা দূর করণের লক্ষে আন্তরিকতার সাথে সৌহার্দের উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।
৭. পার্বত্য এলাকায় সংঘটিত নানা উস্কানি বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস সৃষ্ঠিকারী অপতৎপরতা রোধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে সরকার, বাঙালী ও উপজাতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যমতে উপনীত হওয়ার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৮. দেশ গঠনে দেশপ্রেমিক সৎ, যোগ্য এবং জনপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক সরকার এবং সুশিক্ষিত ও যোগ্যতা সম্পন্ন জনগোষ্ঠি যার কোন বিকল্প নেই এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে পার্বত্য এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে গণশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠার প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৯. পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ সম্পদ সম্ভাবনার এক অপরিমেয় এবং বিপুল ভান্ডার ও সম্বাবনার প্রতিশ্রুত প্রান্তর, এতদসত্ত্বেও বাঙালী পাহাড়ীদের মধ্যে সুন্দর/মধুর সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় সকল সম্ভাবনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে এমতাবস্থায় সম্পদ সম্ভাবনা এই এলাকার ভূগর্ভস্থ ও উপরিস্থ সকল সম্পদের সুসম উন্নয়ন ও বন্টনের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে যা প্রকারান্তে সমগ্র দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
১০. পার্বত্য অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১১. পার্বত্য অঞ্চলের দূর্গম এলাকায় যাতায়াতের লক্ষ্যে নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট বিনির্মাণ এবং কাপ্তাই লেক এলাকায় নৌ-পথ উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
১২. পার্বত্য অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃষ্ঠি কল্পে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান সহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হবে।
১৩. পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তিতে সংবিধানের আলোকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সহিত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তি করা হবে।
১৪. পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানের কারণেই অনেক দেশই আজ এ অঞ্চলটি গ্রাসের পাঁয়তারা শুরু করেছে। অঞ্চলটির একদিকে যেমন রয়েছে বিশালাকৃতির পাহাড়ী অবস্থান অন্য দিকে (পশ্চিমে) রয়েছে বর্তমান বিশ্বের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু বিশাল জলরাশি। নৌ শক্তি বর্তমান বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রধান ও অন্যতম প্রপঞ্চক এমতাবস্থায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানকে সুসংহত করনের লক্ষ্যে নৌ-শক্তি বৃদ্ধিসহ সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।